আজ বিশ্ব কন্যা শিশু দিবস, এই দিনে সকল কন্যা শিশুদের প্রতি থাকলো অপেক্ষিম ভালবাসা। তাদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে বাচার জন্য সকলের আন্তরিক সহযোগিতার আহ্বান।
জাতীয় ও বিশ্ব বাস্তবতা…
কন্যাশিশু অধিকার বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার
দ্যুতিময় বুলবুল।
আজ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রোজ সোমবার, বাংলাদেশে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস। ২০০৩ সালে কন্যাশিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ৩০ সেপ্টেম্বরকে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে, প্রতি বছর এই দিন, বাংলাদেশে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে নারী ও কন্যাশিশুদের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিক ভেদাভেদ ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করার লক্ষে- জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য, ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘জাতীয় কন্যাশিশু দিবস’ পালনের আদেশ জারি করে।
আদেশে বলা হয়, আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সপ্তাহ (২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর) এর দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কন্যাশিশুর জন্ম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনাকাঙ্ক্ষিত হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে, গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থায় কন্যাশিশুর জন্মকে বাড়তি বোঝা হিসেবে বিরক্তির সঙ্গে গ্রহণ করা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে শিক্ষিত, সচেতন, কর্মদক্ষ একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার সুযোগ থেকে কন্যাশিশুরা অনেকাংশেই বঞ্চিত হয়।
মূলত কন্যা শিশুদের নিরাপদ জীবন, শিক্ষার অধিকার, খাদ্য ও পুষ্টির সুরক্ষা, আইনি সহায়তা ও ন্যায় বিচারের অধিকার, স্বাস্থ্যকর জীবনের অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা ও বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বলপূর্বক বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য এ দিবসের সূচনা হয়।
কারণ, আজকের কন্যাশিশু আগামী দিনের জায়া, জননী, ভগ্নি, শিক্ষক, সমাজকর্মী, উদ্যোক্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, পরামর্শদাতা, পরিবার প্রধান, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী প্রভূতি। ফলে কন্যাশিশুদের আধুনিক পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য দিবসটির গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, কন্যাশিশুকে বাদ দিয়ে দেশে কোনো ভাবেই টেকসই উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব না। তাই মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ পুত্র ও কন্যাশিশুর উন্নয়ন, সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের ‘আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস’ চালুর ৮/৯ বছর আগেই, বাংলাদেশে এই জাতীয় কন্যাশিশু দিবস চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশের কন্যাশিশুদের শিক্ষার অধিকার, খাদ্য ও পুষ্টির সুরক্ষা, আইনি সহায়তা, ন্যায় বিচারের অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা, বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং বলপূর্বক বাল্যবিবাহ বন্ধ করার লক্ষে প্রতি বছর ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালন করা হয়। এবার ২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের থিম হলো ‘‘কন্যাশিশুর স্বপ্নে গড়ি আগামীর বাংলাদেশ।”
২০১১ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস’প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় কানাডা এই আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উদযাপনের প্রস্তাব তোলে। এরপর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ রেজোলিউশন ৬৬/১৭০ গ্রহণ করে। কন্যাশিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে মেয়েরা যে সব কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, তার স্বীকৃতি ও মোকাবেলার জন্য এই রেজোলিউশন গৃহীত হয়।
ফলে ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের প্রস্তাব রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় গৃহীত হয় এবং ১১ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস বা ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ গার্ল চাইল্ড ঘোষণা করা হয়। তারপর ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর থেকেই বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালন করা হচ্ছে।
প্রতি বছর এই আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের একটা থিম বা প্রতিপাদ্য থাকে। প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের থিম ছিল “বাল্য বিবাহ বন্ধ করো”। এরপর থেকে গত এক যুগ ধরে প্রতি বছর একটি করে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের থিম ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশ্ব উন্নতি, বৈষম্য রোধ, সহিংসতা এবং বৈশ্বিক দারিদ্র্য দূর করার জন্য দিনটি এখন ইতিবাচক পরিবর্তন এবং সমতার চাবিকাঠি।
এই আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা। মূলত কন্যা শিশুর শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্য অধিকার, আইনি অধিকার ও ন্যায় বিচার, বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বলপূর্বক বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা এই দিবসটির প্রধান প্রতিপাদ্য। সঠিক সম্মান, সমর্থন, সম্পদ এবং সুযোগের সঙ্গে, বিশ্বের ১.১ বিলিয়নেরও বেশি কন্যাশিশুর সীমাহীন সম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত করা এই দিবসের লক্ষ্য।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ শিশু। সেই হিসাবে শিশুর সংখ্যা প্রায় ৬০ মিলিয়ন, যাদের বয়স ১৮ বছরের কম। এই শিশুদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ কন্যাশিশু। ফলে বাংলাদেশে এখন কন্যাশিশু ১ কোটি ৬০ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ ভাগ৷ অন্যদিকে, বিশ্বে মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ কন্যাশিশু। আর তাদের অর্ধেকই কন্যাশিশু। সারাবিশ্বেই এই কন্যাশিশুরা নানাভাবে অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত এবং লিঙ্গ বৈষম্য ও সহিংসতার শিকার ৷